নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার নির্ভরযোগ্য স্থান হচ্ছে হাসপাতাল। যেখানে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ বজায় থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বৃহত্তর বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের ক্ষেত্রে ঘটছে উল্টোটা। স্বাস্থ্য সুরক্ষার পরিবর্তে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী, স্বজন এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের ফেলা হচ্ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে। হাসপাতালের জনগুরুত্বপূর্ণ জরুরী বিভাগের কাছে আবর্জনার ভাগাড় নির্মাণের মাধ্যমে এ ঝুঁকির সৃষ্টি করেছেন তারা। যা নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা, রোগী এবং তাদের স্বজনরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তবে হাসপাতালের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ওই স্থানে ডাম্পিং স্পট বা আবর্জনার ভাগাড় তৈরি করা ছাড়া অন্য কোন পথ নেই বলে দাবি করেছেন কর্তৃপক্ষ। এমনকি এ জন্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়লে সে দায় সিটি কর্পোরেশনকে নিতে হবে বলে জানিয়েছেন পরিচালক। হাসপাতাল সূত্রে জানাগেছে, চিকিৎসাধীন রোগীদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কিংবা চিকিৎসা সামগ্রীর উচ্ছিষ্ট অংশ অপসারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিজস্ব কোন ব্যবস্থা নেই। দীর্ঘ বছর ধরে রোগীদের মল-মূত্র, অপারেশন সামগ্রীসহ বিভিন্ন জীবাণুবাহী মালামাল বা বর্জ্য ফেলা হয় হাসপাতালের পেছনে। যা প্রতিনিয়ত অপসারণ করে নির্দিষ্ট ডাম্পিং স্পটে ফেলে দেয়া হয়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির গত তিন মাস ধরে সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা বর্জ্য অপসারণ করছে না বলে দাবি হাসপাতাল পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেনের। আর তাই বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে নিজস্ব উদ্যোগে হাসপাতাল চত্বরেই ডাম্পিং স্পট তৈরি করছেন তারা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালের পশ্চিম পাশে জরুরী বিভাগে প্রবেশ গেটের কাছেই বান্দ রোড ঘেঁষে নির্মাণ করা হচ্ছে ডাম্পিং স্পট। স্ক্যাভেটর দিয়ে হাসপাতালের সামনে সামাজিক বনাঞ্চলের এক পাশে বিশাল গর্ত করা হচ্ছে। সেখানেই হাসপাতালের সকল বর্জ্য অপসারণ করে ফেলা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা বাকেরগঞ্জের বাসিন্দা তাসলিমা আলমের স্বামী সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য আনসারুল আলম বলেন, ‘একটি হাসপাতালের প্রবেশ গেটে এমন আবর্জনার ভাগাড় নজিরবিহীন। দেশের কোথাও এমনটি আছে বলে মনে হয় না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কি বুঝে আবর্জনার ভাগাড় করার জন্য এই স্থানটিকে বেছে নিয়েছে তা বোধগম্য নয়। এই আবর্জনার ভাগাড়টি শুধুমাত্র হাসপাতালে রোগ দেখাতে আসা রোগী এবং তাদের স্বজনদেরই নয়, বরং স্থানীয় বাসিন্দাদেরও মারাত্মকভাবে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলবে। এদিকে হাসপাতালের সামনের ব্যবসায়ী মিজান বলেন, ‘জরুরী বিভাগের কাছে সামাজিক বনায়নের জায়গাতে অনেক দিন ধরেই হাসপাতালের বর্জ্য ফেলা হতো। প্রথম দিকে ছোট একটি গর্ত করে তার মধ্যে ফেলা হলেও এখন বড় ধরনের গর্ত করে স্থায়ী ডাম্পিং স্পট তৈরি করা হচ্ছে। স্বল্প পরিসরে যখন আবর্জনা ফেলা হতো তখনই দুর্গন্ধে মানুষ চলাচল করতে পারেনি। এখন স্থায়ীভাবে ডাম্পিং স্পট করা হলে এটা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
তবে এ ছাড়া বিকল্প কোন ব্যবস্থা নেই বলে দাবি করেছেন হাসপাতাল পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেন। তিনি বলেন, হাসপাতালের অন্য কোথাও ময়লা ফেলার জন্য জায়গা সৃষ্টি করা স্বাস্থ্য সম্মত নয়। অন্যদিকে ডাম্পিং পয়েন্ট না থাকায় গত সাড়ে তিন মাস যাবত সিটি কর্পোরেশন হাসপাতালের কোন ময়লা নিচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে হাসপাতালের মূল ভবন থেকে কিছুটা দূরে নতুন ডাম্পিং পয়েন্ট করা কাজ চলছে।
সাড়ে তিন মাস ধরে আবর্জনা অপসারণের বিষয়টি স্বীকার করে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের প্রধান ডা. রবিউল ইসলাম বলেন, ‘করোনার কারণে হাসপাতালের আবর্জনা সংগ্রহ বন্ধ রাখা হয়েছে। কেননা হাসপাতালে বর্জ্যে জীবাণু রয়েছে। পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা এগুলো অপসারণ করতে গিয়ে নিজেদেরই আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর তারা আক্রান্ত হলে গোটা নগরীর মানুষ আক্রান্ত হবেন। এ কারণেই আপাতত আবর্জনা অপসারণ কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের বর্জ্য অপসারণের জন্য আমরা হাসপাতাল চত্বরে একটি গর্ত করে দিয়েছি। সেটা আবর্জনায় ভরে গেছে। এ কারণে পাশেই আরেকটি গর্ত করে ডাম্পিং স্পট নির্মাণ কাজ চলছে। সেটাও সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে করে দেওয়া হচ্ছে। গর্তে আবর্জনা ফেলে প্রতিনিয়ত ব্লিচিং দিয়ে জীবাণু ধ্বংস করতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। প্রতিদিন ব্লিচিং ছিটালে এ থেকে জীবাণু ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকবে না বলেও জানান তিনি।
Leave a Reply